লেখক: মুঞ্জুরুল হক
শিক্ষক—এই শব্দটির ভেতরেই আছে আলোর এক উৎস, মানবতার এক বিশুদ্ধ প্রতীক। শিক্ষকই সেই ব্যক্তি যিনি জ্ঞানের আলোয় অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করেন, নৈতিকতার বীজ বপন করেন এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাই শিক্ষককে কেবল পেশাজীবী নয়, বরং সমাজের নীরব স্থপতি বলা যায়।
প্রতি বছর শিক্ষক দিবস আসে আমাদের মনে করিয়ে দিতে—যাদের ত্যাগ, ধৈর্য ও নিষ্ঠার ফলে আমরা আলোকিত হয়েছি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রকৃত শিক্ষক কেবল বইয়ের পাঠ দেন না, বরং শেখান জীবনবোধ।
আল-কুরআনের প্রথম আয়াতেই শিক্ষা ও জ্ঞানের গুরুত্ব ঘোষিত হয়েছে “পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আল-আলাক, আয়াত ১) এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জ্ঞানই মানবতার প্রথম সোপান, আর সেই জ্ঞান পৌঁছে দেন শিক্ষকেরা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমান-জমিনের সব প্রাণী, এমনকি পিঁপড়েও দোয়া করে সেই ব্যক্তির জন্য, যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৮৫) অর্থাৎ, একজন শিক্ষক কেবল সমাজের নয়, বরং পুরো সৃষ্টির কাছেও দোয়ার পাত্র।
আজকের সমাজে শিক্ষকের প্রতি সেই আগের মতো সম্মান ও ভালোবাসা অনেক ক্ষেত্রে কমে গেছে। কেউ কেউ শিক্ষককে শুধুই চাকরিজীবী মনে করে, অথচ তিনিই জাতির দিশারী।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “তুমি কি কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবে না?” (সূরা আল-আন’আম, আয়াত ৬৩) এই আয়াতের বার্তা খুব স্পষ্ট—কৃতজ্ঞতা ঈমানের অংশ। শিক্ষককে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা মানেই জ্ঞানের উৎসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।
আমাদের সমাজে শিক্ষকদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার রক্ষা করা তাই কেবল সামাজিক নয়, ধর্মীয় দায়িত্বও।
শিক্ষক দিবস কেবল শুভেচ্ছা বিনিময় বা ফুল দেওয়ার দিন নয়। এটি আত্মসমালোচনার সময়—আমরা কি সত্যিই আমাদের শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছি?
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।”(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮১১)
তাই- শিক্ষকসহ যেকোনো উপকারকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়।
একজন শিক্ষক যখন দেখেন তাঁর ছাত্র সৎ, শিক্ষিত ও নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে—তখন সেটিই তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার। আর একজন ছাত্রের কর্তব্য হলো, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা, দোয়া ও ভালোবাসা ধরে রাখা।
শিক্ষক দিবস তাই শুধু এক দিনের উৎসব নয়; এটি সারাবছরের কৃতজ্ঞতার পাঠ—যে পাঠ শেখায়, জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা ও শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা কখনো যেন হারিয়ে না যায়।
মুঞ্জুরুল হক
শিক্ষার্থী, শেরপুর শহীদিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসা, শেরপুর, বগুড়া।কামিল ১ম বর্ষ
বিভাগ: হাদিস
Tags
শিক্ষা